রংপুরে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য ‘আলোকবর্তিকা’ উন্মোচিত হয়েছে। নগরীর শালবন ইন্দ্রা মোড়ে বুধবার দুপুরে ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এর ভাস্কর অনীক রেজা। তবে এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউকে দেখা যায়নি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে নির্মাণ করা হলেও সিটি মেয়রসহ করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করতে রাজি হননি। ফলে এর নির্মাতা ভাস্কর অনীক রেজা নিজেই ভাস্কর্যের ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় রোকেয়া কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক সংস্কৃতিককর্মীসহ বিশিষ্ট নাগরিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ভাস্কর অনীক রেজা, কবি ফারজানা হক বিথি, রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল আনাম সুমন, ড. এ আই মুসা, অনিমা বর্মা, আজাহারুল ইসলাম দুলাল, জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলসহ অন্যরা।
এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হলেও প্রশাসনের কিংবা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কোনও কর্মকর্তা এটি উদ্বোধনের সময় না আসায় আলোচকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে অনেকের চেহারা উন্মোচিত হলো।
আলোচকরা বলেন, যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে, এর বিরোধিতা করেছে সেই মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরাজভাজন হওয়ার ভয়ে তারা আসেননি। তবে তারা আসুক বা না আসুক, ভাস্কর্যটি বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকে আরো অম্লান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
ভাস্কর অনীক রেজা জানান, এই ভাস্কর্যের প্রাথমিক কাজ তার পীরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে শুরু করেছিলেন। ওই সময় দুই দফায় কে বা কারা তার অনুপস্থিতিতে তা ভেঙে ফেলে। এতে তিনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হন। একারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ‘আলোকবর্তিকা’ ভাস্কর্যটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে। এটির উচ্চতা মাটি থেকে ২০ ফুট। এর মধ্যে শুধু পাথর-কংক্রিট থেকে বেরিয়ে আসা রোকেয়ার প্রতিকৃতি লম্বায় প্রায় ১২ ফিট। আর বেদির চারদিক জুড়ে পঞ্চাশ স্কয়ার ফিট। পাথরের ভিতর থেকে সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার শক্তি নিয়ে বেরিয়ে আসা রোকেয়ার এই ভাস্কর্যটিতে জন্ম-মৃত্যু সন উল্লেখসহ তার লেখা কিছু বই ও বাণী রয়েছে। যার মধ্যে অবরোধবাসিনী, মতিচুর, পদ্মরাগ, সুলতানার স্বপ্নসহ কিছু বইয়ের পাথররূপ নজর কাড়বে। এছাড়া রাতের রূপ দেখতে ভাস্কর্যটির চারপাশে লাইটও লাগানো হয়েছে।