জুন ৭, ২০২৩ ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ || শতাব্দীর দৃষ্টিকোণ
আন্তর্জাতিক শিরোনাম

করোনা নয়, আগে পশ্চিমবঙ্গ জিততে চান মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রচারে দফায় দফায় রাজ্যটি সফর করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বে থেকে যে রকম ঘন ঘন তারা রাজ্যটিতে নির্বাচনি প্রচারণায় গেছেন তা নজিরবিহীন।

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলি একে একে গণ কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ব্যতিক্রম বিজেপি। মোদি, শাহ, নাড্ডাদের রাজ্যটি সফর এবং সেখানে জনসভার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

যখন কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় দফার ঢেউ সারা দেশে আছড়ে পড়ছে; মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বার বার জরুরি সাহায্য চেয়ে বার্তা গেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। প্রতিবারই শুনতে হয়েছে, দেশের সরকার প্রধান পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে খুব ব্যস্ত। তিনি প্রচারের দায়িত্ব থেকে ফুরসৎ পেলেই…।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অবধারিতভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছে গুজরাট দাঙ্গার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির সেই ঐতিহাসিক উক্তির কথা। নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রশাসনিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কার্যত রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে বাজপেয়ি নরেন্দ্র মোদিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রজা পালনের রাজধর্মের কথা। প্রশ্ন উঠছে, এখনও নিজের দলের রাজনৈতিক দায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বকে কি অস্বীকার করছেন না মোদি?

ভারতের সংবিধান কী বলে এই বিষয়ে? প্রধানমন্ত্রী প্রচারে ব্যস্ত বলে কোভিড নিয়ন্ত্রণের আর্জিতে কান দিতে পারছেন না— এই ব্যাপারে‌ আইন কী বলে? বিশিষ্ট আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‌আইন নির্দিষ্ট করে কিছুই বলে না। আপনি কেমন মানুষ, কোনটাকে গুরুত্ব দেবেন, প্রাধান্য দেবেন, তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। কিন্তু এই প্রধানমন্ত্রী, এই সরকারের কাছ থেকে সে রকম কিছু প্রত্যাশা না করাই ভালো। প্রধানমন্ত্রী যদি ভাবেন পশ্চিমবঙ্গে যে করেই হোক জিততে হবে, সেটাই তার প্রায়োরিটি, তাহলে কিছু করার নেই।

অথচ যে রাজ্যে মোদি বা বিজেপির অন্যান্য নেতারা নিয়মিত প্রচারে যাচ্ছেন, সেখানকার অবস্থা সত্যি সঙ্গিন। সংক্রমণের হিসাবে রাজ্যের শীর্ষে আছে কলকাতা। সেখানে কোভিড হাসপাতালগুলো প্রায় ভর্তি। কোথাও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। অক্সিজেনের জোগানে টান পড়েছে। এমনকি কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে যে ওষুধগুলো প্রয়োজন, তার মজুতেও টান পড়েছে। আড়ালে শুরু হয়ে গেছে ওষুধের কালোবাজারি এবং কার্যত যথেচ্ছাচার হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার রাজ্যে করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপিকে অভিযুক্ত করেছেন। মমতার অভিযোগ, ভোটে জেতার জন্য অন্যান্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ঢুকিয়েছে বিজেপি। আর তাদের মাধ্যমেই রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। মমতার ভাষায়, ‘বিজেপি বাইরে থেকে হাজার হাজার লোক ঢোকাচ্ছে। তারা রোগ (করোনা) ছড়িয়ে দিয়ে পালাচ্ছে।’

মমতা বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনা কী সুন্দর কমে গিয়েছিল। এতোদিনে আরও বেশি মানুষকে যদি ভ্যাকসিন দেওয়া যেতো তাহলে করোনা এতো বাড়তে পারতো না। তার ওপর ভোটের জন্য অন্য রাজ্য থেকে এখানে বহিরাগতদের নিয়ে এসেছে বিজেপি। আর তারাই এখানে এসব রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

গত কয়েকদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমতি চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু সেই অনুমতি দেয়নি মোদি সরকার, এমন অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Similar Posts

error: Content is protected !!