জুন ২, ২০২৩ ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ || শতাব্দীর দৃষ্টিকোণ
জাতীয় শিরোনাম

বিমানবন্দরে মোদিকে অভ্যর্থনা জানালেন শেখ হাসিনা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন এবং ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তার এই সফর। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসাবে যোগ দিয়েছেন।

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা সেরে মোদি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। একই দিন বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন।

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। রাজধানীর যেসব রাস্তায় মোদি চলাচল করবেন, ওইসব রাস্তায় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে মনোরমভাবে সাজানো হয়েছে। মোদির সফর ঘিরে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

মোদি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। ইতোমধ্যে তিনটি চূড়ান্ত হয়েছে। এসবের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ব্যাপারে সহযোগিতা, পরিবেশগত সুরক্ষায় সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক এবং দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঢাকা ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন সামনে থাকায় সেখানকার নির্বাচন কমিশন এভাবে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শুধু বাংলাদেশ অংশে চালানো হবে।

মোদির সফরকালে বাংলাদেশ-ভারত স্বাধীনতা সড়কের উদ্বোধন হবে। মুক্তিযুদ্ধকালে এই সড়কে ১৭টি গাড়ির বহর নিয়ে মুজিবনগরে এসে অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। মুজিবনগর থেকে নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত গেছে এ সড়ক। সফরকালে আশুগঞ্জে একটি সমাধিসৌধ উদ্বোধন করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের স্মরণে এই সমাধিসৌধ। এছাড়াও কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কুটিবাড়িতে ভারতের অর্থায়নে যে সংস্কার কাজ হয়েছে, তারও উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার পর তার একটা আনুষ্ঠানিকতা থাকবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন উপলক্ষ্যে ১৮ দেশে যৌথভাবে কর্মসূচি উদ্যাপন করবে বাংলাদেশ ও ভারত। এই ১৮ দেশের নাম ঘোষণা করা হবে। উদ্যাপনে কী কী কর্মসূচি থাকবে, সেটিও ঘোষণা হবে।

নরেন্দ্র মোদি এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুবিধার ধরন কী হবে, তা নিয়ে ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা)’ চুক্তির প্রস্তাব করেছে ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশ সাফটা চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে থাকে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন ঘটলে সেই সুবিধার ধরনে কী হবে, সে ব্যাপারে একটি যৌথ স্টাডির বিষয় যৌথ ঘোষণায় থাকতে পারে। বাংলাদেশের ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট এবং ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ স্টাডি পরিচালনা করবে। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই নেতার নির্দেশনা যৌথ ঘোষণায় থাকতে পারে।

সফরের দ্বিতীয় দিন, ২৭ মার্চ সকালে মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তিনি সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শনিবার বিকালে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে। বৈঠকের প্রান্তিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

উভয় প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে নিজ নিজ দেশের পক্ষে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পৃথক দুটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করবেন।  সফর শেষে ২৭ মার্চ রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।

Similar Posts

error: Content is protected !!