শুধু নারী নির্যাতন নয়, সরকার সারা বাংলাদেশকে ধর্ষণ করছে বলে মন্তব্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
তিনি বলেন, “আমাদের এই আন্দোলন কর্মসূচি প্রেসক্লাবের সামনে শুধু সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সারা দেশে আমাদের এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ শুধু নারী ও শিশুদের রক্ষার জন্য নয়, নিজেদের অধিকার ও এই দেশকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
আরও বলেন, “আজকে জাতি মহাসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এই সংকট তাদের অস্তিত্বের সংকট। এই সংকট এ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ধ্বংস করে দেওয়ার সংকট। আমরা অনেক আগেই লড়াই শুরু করেছিলাম আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য।”
“আমাদের মা-বোনেরা সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি ব্রিটিশ আমলে নারীরা কীভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। আমাদের দেশেও এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন আমাদের দেশের নারীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক নারী আছে যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, তাদের সম্ভ্রম চলে গিয়েছে কিন্তু তারা কখনো মাথা নত করেননি।”
“এই যে শুরু থেকেই লড়াই করছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একজন নারী হয়ে তিনি লড়াই করছেন এ দেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, এ লড়াইয়ে আমরা জয়ী হবো। আমাদের এই লড়াইয়ে পরাজিত হবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচার সরকার।”
তিনি আরও, “আমরা দেখলাম জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের যে নারী নির্যাতনের হার বেড়ে গেছে, বাংলাদেশের ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে গেছে, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তার এই স্টেটমেন্টে বাংলাদেশের মানুষের সম্মান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই স্টেটমেন্ট এই দেশের মানুষের শান্তি ও সম্মান নষ্ট হয়ে গেল।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই ধর্ষণের দায় তারা এড়াতে পারেন না। আমি বলি কী, তারা যে সরকার তৈরি করেছেন, এই সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে যে অধিকার অর্জন করেছে আপনারাও গায়ের জোরে, বন্দুক ধরে, আগের রাতে ভোট চুরি করে, সে অধিকার হরণ করেছেন। ন্যূনতম যে গণতান্ত্রিক অধিকার সে অধিকার বাংলাদেশের মানুষের নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথা বললেও জেল হয়। সরকার আইন করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা। সরকারের বিরুদ্ধে যে কিছু একটা বলতে চায় তাদের ধরে নিয়ে কারাগারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “সারা দেশে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। সরকারকে এখন মানুষ কোন ভয় পায় না। মানুষ ভয় পায় পুলিশকে। পুলিশ তো আওয়ামী লীগ সরকারকে বলে দেশের মালিক আমরা। তাহলে সরকার কীভাবে পুলিশকে বলবে, সারা দেশে যে ধর্ষণ হচ্ছে, দেশের মধ্যে যে অন্যায় অবিচার করছে, মাদক কারবারি করছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করো। কারণ সরকারের লোকেরাই তো এসবের সঙ্গে জড়িত সবচেয়ে বেশি।”
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফখরুল বলেন, “এটা নিয়ে কিছু হলো কি? কিছুই হলো না। কয়েক দিন পত্রিকায় লেখা হলো। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রধান একসঙ্গে বৈঠক করলো। তারা বললেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিষয়টাকে হালকা করে দেওয়া হলো। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা তো মনে করল যে আমরা বিচারের বাইরে চলে গেছি। দেশের মানুষকে অধিকার দিয়েছে যে সংবিধান সেই সংবিধান কে আপনারা শেষ করে দিয়েছেন।”
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “গত এক বছর আগে এই বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। নোয়াখালীতে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে আছে এই আওয়ামী লীগ। সিলেটের গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এতে জড়িত ছাত্রলীগ। এ সরকারের কারণে এসব হচ্ছে। সরকার যে সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছেন এই সমাজে ভালো মানুষ হওয়ার উপায় নেই। যারা এ দেশে গুন্ডা-বদমাশ, তারাই আপনাদের সঙ্গে টিকে থাকবে আর যারা এ দেশের ভালো চায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায় তাদের ধ্বংস করে দেন আপনারা।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “এই সংগ্রাম শুধু বিএনপি নয়। এই সংগ্রাম সারা জাতির। এই সংগ্রাম সারা দেশের মানুষকে, দেশকে, মা-বোনদের রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।জাতি, গোত্র বর্ণ, নারী-পুরুষ সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যে দানব সরকার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদের সরানোর জন্য।আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকার পতনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।”