চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার (৯ মে) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।
এর আগে সকালে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর আবেদনের বিষয়ে মতামত দিয়ে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি মঞ্জুর করেনি বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটা আবেদন নিয়ে আসছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আপনারা এও জানেন তিনি (খালেদা জিয়া) আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে প্রিজনে রয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানটি, তিনি তাকে মানবতার তাগিদে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর (১) ধারা অনুযায়ী তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে সুবিধা মতো চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং বাসায়ই অবস্থান করছিলেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তার ছোট ভাই আবার আসছিলেন আবেদনটি করেছিলেন, তিনি বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমাদের। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। সেটাও আপনারা জানেন।’
‘আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মত আসছে, তারা স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছেন, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে, এটা দ্বিতীয় বার…তার সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর কোন অবকাশ এই ৪০১-এ দ্বিতীয়বার নেই। এটা তারা জানিয়ে দিয়েছেন।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘শর্ত সাপেক্ষে সেই সাজাটা স্থগিত হয়েছিল যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না বা বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী, আমরা তাদের আবেদনটা মঞ্জুর করতে পারছি না। এখন তাদের আমরা এটাই জানিয়ে দেব।’
আপনারা কী বিষয়টি মানবিকভাবে দেখছেন না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কথাটা আপনি কেন বললেন? মানবিক বিষয় দেখব বলেই তো আমরা পাঠিয়েছি। আইন অনুযায়ী তাকে কোনভাবে দেয়া যায় কি-না। প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেয়ার কোন স্কোপ নেই এটাই আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়েছে। মানবিকতা দেখিয়েই প্রধানমন্ত্রী বাসায় রেখে চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছিলেন।’
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ আছে সরকারের কারণে বেগম জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতেও যদি বিএনপি এমন অভিযোগ তোলে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেখুন বিএনপি কী অভিযোগ করল সেটা প্রশ্ন আসে না। আমাদের আইন অনুযায়ী যেটুকু করণীয় আমরা সেটুকু করছি। যেখানে মানবতার প্রশ্ন এসেছে সেটাও আমরা করেছি। বিএনপি আবেদন করতেই পারে। আইনের বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’
দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দী ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে- এই দুটি শর্তে তার দণ্ড স্থগিত করা হয়।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ মে বেগম জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। গত ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে শামীম ইস্কান্দার আবেদনটি দিয়ে আসেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়।